ডামি নির্বাচনে ফেইক ভোটার উপস্থিতি দেখাতে আওয়ামী লীগের যত কু-কৌশল

0
1992

গত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের সাথে বর্তমান ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ নির্বাচনের মূল পার্থক্য হলো- এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই এর বৈধতা নিয়ে আপত্তি উঠছে। আগের দুটা নির্বাচন যে ভোটগাকাতির আয়োজন তা বুঝতে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু এবার অনেক আগেই ভোট ডাকাতির পুরো আয়োজন জাতীর সামনে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।

এবার দেশী-বিদেশী সব ধরণের চাপকে উপেক্ষা করে আবারও একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। এবার সবাইকে বোকা বানানোর জন্য এবং নিজের দল অর্থাৎ দেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র ‘জনগন’ -এর বাইরে আর কারো কোন অধিকারের দরকার নাই এমন এক নব্য বাকশালী নির্বাচনে জনআগ্রহ ও ফেইক ভোটার হাজিরা দেখানোর জন্য দলটি বেশ কিছু কু-কৌশলের অশ্রয় নিতে যাচ্চে। এই ঘৃণ্য প্রকৃয়ায় আগত নির্বাচনে প্রায় ১২ কোটি ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে বলে আশংঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা।

আসন্ন ০৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রতি যেমন দেশের প্রধান ও সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলনকারি সকল রাজনৈতিক দলসমূহের আস্থা ও বিশ্বাস নাই, তেমনি জাতিসংঘসহ তাবৎ গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেই কোনো আগ্রহ কিংবা সমর্থন। বস্তুত, নির্বাচনের আগেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনটি গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও বাংলাদেশের মানুষের কাছে সকল গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের ফলাফল ইতোমধ্যেই আগাম নির্ধারিত যা সর্বমহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ‘ডামি নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তাই ফ্যাসিস্ট সরকার আগামি নির্বাচনকে বাংলাদেশের মানুষ এবং বহির্বিশ্বের কাছে অংশগ্রহণমূলক ও ভোটার হাজির হয়েছে- এমনটা দেখাতে নানা ফন্দি ও কূটকৌশলের আশ্রয় নিতে যাচ্ছে। আমরা এই প্রতিবেদনে এক নজরে সেই সব কু-কৌশলগুলো দেখে নিবো।

১। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দলীয় সাংসদদের স্বতন্ত্র প্রার্থিতার অনুকূলে প্রজ্ঞাপন জারিঃ

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীনভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে যে দলীয় সাংসদেরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিযোগিতা করতে তাদের বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসনের ১% ভোটার সমর্থনের প্রমান দেখাতে হবেনা। যা এর আগে কখনও করা হয় নাই। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও উক্ত আসনের বর্তমান দলীয় সংসদ সদস্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় উৎসাহিত করার জন্যই এই বিজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে।

২। সামাজিক বেষ্টনীর আওতাভুক্ত হতদরিদ্র মানুষদের জিম্মি করা:

আগামী ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে তাদের প্রথম টার্গেট দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর “সামাজিক বেষ্টনীর” নানামুখী প্রকল্পের আওতাধীন লক্ষ লক্ষ হতদরিদ্র মানুষ। যার অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিত করতে উপকারভোগীদের সংশ্লিষ্ট কার্ড আগাম জমা নেয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা এই কার্ড আগাম জমা নিচ্ছেন বলে উপকারভোগী সূত্রে জানা গেছে। এক্ষেত্রে, কেউ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না হলে তার কার্ড বাতিলেরও হুঁশিয়ারি দেয়া হচ্ছে”। কার্ড জমা রেখে সাফ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে ৭ই জানুয়ারি সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় ভোট দিলে কার্ড ফেরত দেয়া হবে। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান শেষেই কেবল এসব কার্ড ফেরত পাবেন বলে জানানো হয়েছে। দেশের প্রায় সকল এলাকায় গ্রামে গ্রামে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা কার্ডধারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কার্ড সংগ্রহ করছেন। আর বলছেন, ভোট না দিলে এসব কার্ড আর ফেরত দেয়া হবে না। বিশেষ করে যারা ভোটকেন্দ্রে যাবে না তাদের খবর আছে বলেও হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন ওই সব নেতাকর্মীরা। এদিকে ভুক্তভোগীরা জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তরের কিছু লোকজনও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, জামালপুর, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের প্রায় সকল জেলার বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক সুরক্ষার উপকারভোগীদের কার্ড জমা নেয়ার এ সকল তথ্য ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় অন্তত দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষ রয়েছেন। সে হিসেবে প্রায় দুই কোটি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতাধীন ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে কেন্দ্রমুখী করা গেলে নির্বাচনে ভোট পড়ার হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা সম্ভব মনে করে আগামি ০৭ জানুয়ারি নির্বাচনে এ সকল ব্যক্তিবর্গকে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো প্রকল্পের প্রধান টার্গেট করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় সরকার অনেকগুলো খাতে ভাতা ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানী ভাতা, ভিডব্লিউবি, ভিজিএফ, ভিজিডি, জিআর, টিআর, ওএমএস, টিসিবি ইত্যাদি।

৩। পোস্টাল ব্যালটের যথেচ্ছ অপব্যবহারের পরিকল্পনা:

আসন্ন ৭ জানুয়ারি “ভোটার উপস্থিতি” বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের দ্বিতীয় টার্গেট হচ্ছে দেশের বিপুল সংখ্যক সরকারী চাকুরীজীবী এবং রেজিমেন্টেড ফোর্সের সদস্য ও পরিবারবর্গের পোস্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানের সুযোগের যথেচ্ছ অপব্যবহার। দেশে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। আর রেজিমেন্টেড ফোর্সের সদস্যদের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা আমাদের জানামতে দুই লাখ চার হাজার ৫৯৬ জন,পুলিশের জনবল প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার, বিজিবির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার, র‍্যাবের সদস্য সংখ্যা ১২ হাজার এবং আনসার ও ভিডিপির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬১ লাখ। আনসারের প্রায় ৬১ লাখ সদস্য সহ অন্যান্য রেজিমেন্টেড ফোর্সের মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৬৫ লাখ। প্রবাসী ভোটার,অন্যান্য সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীররতদের হিসাব ধরলে সংখ্যাটি প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াবে, যারা ভোটের দিন চাকুরী সূত্রে কিংবা দায়িত্ব পালনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন সময়ে নিজ নিজ ভোটিং এলাকার বাইরে থাকবেন। যাদের ভোট দেয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে পোস্টাল ব্যালটে ভোট প্রদান। নির্বাচনী আইনে ভোটদানের ক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালট ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও এর আগের কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনসমূহে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রদত্ত ভোটের রেকর্ড অনুযায়ী, পোস্টাল ব্যালটে প্রদত্ত ভোট বরাবরই নগণ্য। আর এ সুযোগটিই ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে বর্তমান মাফিয়াতন্ত্র নিজের সুবিধা অনুযায়ী অপব্যবহার করার ফন্দি আঁটছে বলে বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। গত ২ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে অবস্থানরত ভোটারদের জন্য এই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কাস্টিং এর বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ভোটকেন্দ্রে সশরীরে সরাসরি উপস্থিত হয়ে ভোটদানে অসমর্থ ভোটাররা আগেই ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে কিছু প্রক্রিয়া মেনে তা যেন ডাকযোগে প্রেরণ করে (পোস্টাল ব্যালট) ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করা হবে। এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, তফসিল ঘোষণার পর ১৫ দিনের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেয়ার অগ্রিম আবেদন করতে হয়। আবেদন প্রাপ্তির পরপরই রিটার্নিং অফিসার সংশ্লিষ্ট ভোটারের কাছে একটি পোস্টাল ব্যালট পেপার ও একটি খাম পাঠাবেন। বিধি অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটের সংশ্লিষ্ট ফর্মটি একজন গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত করার শর্ত আছে। যদিও এ পদ্ধতিতে ভোট প্রদান একটি জটিল প্রক্রিয়া তবুও বিভিন্ন রেজিমেন্টেড ফোর্সের বিশেষ করে আনসার ভিডিপি ও বিজিবির অতি উৎসাহী দলবাজ কর্মকর্তারা এবার গোঁজামিল দিয়ে ‘পোস্টাল ব্যালট’ পদ্ধতি ব্যবহার করে “ভোটার উপস্থিতি” বাড়ানোর নতুন ফন্দি করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

২৪ ডিসেম্বর মানবজমিনে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী “দেশে প্রায় ৬১ লাখ আনসার সদস্য রয়েছে। এদের পরিবারের সদস্য যেমন মা-বাবা, ভাই-বোন, শ্বশুর-শাশুড়িসহ প্রতি পরিবার থেকে ৫ জন ভোটার ধরে হিসাব করা হয়েছে। এদের বাধ্যতামূলক ভোটকেন্দ্রে আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এটা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে ৬১ লাখ আনসার সদস্যের প্রতি পরিবারে ৫ জন করে মোট ৩ কোটি ৫ লাখ ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। এজন্য ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে চাকরিরত আনসার সদস্যদের পরিবারের ভোটার তালিকার ডাটাবেইজ সংগ্রহ করে তা জেলা আনসার অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা ভোটার তালিকা ধরে ধরে যাচাই-বাছাই করবে যে সদস্যদের পরিবারের লোকজন ভোট দিতে আসলো কিনা।

উল্লেখ্য, এ নির্বাচনে আনসার ও ভিডিপিকে যথেচ্ছভাবে অপব্যবহারের লক্ষ্যেই বর্তমান মহাপরিচালককে বছর খানেক আগে আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আর তিনি যোগদান করেই দেশব্যাপী আওয়ামী ক্যান্ডিডেট নির্ধারণের দলীয় সার্ভে পরিচালনা, নির্বাচনে আনসার ও ভিডিপির পোস্টাল ব্যালটের যথেচ্ছ অপব্যবহার, আনসারের মাধ্যমে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কূটকর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন শুরু করেন। উল্লেখ্য যে, আনসারের ডিজি একেএম আমিনুল হক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামিমের সহোদর ভাই। ইতোপূর্বে তিনি সরকারী ট্রাস্ট ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন বলে জানা যায়।

৪। আওয়ামী দলীয় ব্যক্তিদের ‘embodied’ আনসার ও ভিডিপি হিসেবে নিয়োগঃ

“ভোটার উপস্থিতি” বাড়াতে ইতোমধ্যে সারাদেশের ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা দায়িত্ব পালনের জন্য বিপুল সংখ্যক আনসার ও ভিডিপির সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাদের যোগ্যতার প্রধান মাপকাঠি হচ্ছে ছাত্রলীগ বা যুবলীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা, যারা ভোটের দিন আনসার ভিডিপির ইউনিফর্ম পরিধান করে ভোট কারচুপিতে এবং “ভোটার উপস্থিতি” বাড়াতে সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। এভাবে সাধারণ মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনকেই নিরাপত্তা কর্মীর আড়ালে নির্বাচন কারচুপির কাজে নিয়োগের তথ্য ইতোমধ্যেই চাওর হয়েছে। আনসার ভিডিপির মহাপরিচালক স্বীকার করেছেন, ‘এবার নির্বাচনে ডিউটি করবে ৫ লক্ষাধিক সদস্য। তারা ৬ দিন ডিউটির জন্য আলাদা ভাতা পাবেন।‘ আর বিশ্বস্ত সূত্র মতে এই ৬ দিনের জন্য আওয়ামী সদস্যদের অস্থায়ীভাবে ‘embodied’ আনসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

২৪ ডিসেম্বর মানবজমিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে প্রায় ৬ লক্ষাধিক আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। নির্বাচনের প্রায় ৮ মাস আগে থেকেই তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তবে গত জুলাই মাসে প্রতিটি জেলা আনসার কমান্ড্যান্টের তত্ত্বাবধায়নে ২১ দিনব্যাপী অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তবে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের সনদপত্র প্রদান করা হয়নি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে বলে এক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

৫। ভোটের দিন পালাক্রমে ভোটকেন্দ্রে মানুষের দীর্ঘ লাইন দৃশ্যমান দেখানোর কূটকৌশলঃ

“ভোটার উপস্থিতি” বাড়িয়ে দেখানোর আর একটি কৌশল হচ্ছে ভোটের দিন মহানগর, জেলা, উপজেলা সদরসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও হাইওয়ের পার্শ্ববর্তী ভোটকেন্দ্র সমূহকে বিশেষ কৌশলের আওতায় নিয়ে আসা। সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন এসব কেন্দ্রে পালাক্রমে মানুষের দীর্ঘ লাইন দৃশ্যমান থাকে তা সুনিশ্চিত করা, যেন এ সব কেন্দ্রে গণমাধ্যম, দেশী-বিদেশী ফরমায়েশি পর্যবেক্ষকদের বিপুল সংখ্যক শান্তিপূর্ণ ভোটার উপস্থিতি দেখানো সম্ভব হয়, যদিও এদের কেউ প্রকৃত ভোটার নয়। এদের মধ্যে যেন বোরকা পরিহিত/ বোরকা ছাড়া মহিলাদের সংখ্যাই বেশি থাকে তাও নিশ্চিত করা হবে। ছিন্নমূল মহিলাসহ অনেককেই অর্থের বিনিময়ে অথবা ভয়ভীতি দেখিয়ে এসব কেন্দ্রে নিয়ে আসার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বস্তি এলাকায় ইতমধ্যেই কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীরা।

৬। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ব্লু-প্রিন্ট অনুযায়ী ইতোমধ্যেই ভোটার উপস্থিতির হার এবং নির্বাচনের ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত হয়ে আছে:

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে প্রকৃত ভোটার উপস্থিতি যাই হোক, প্রকৃত বিজয়ী যেই হোক, বর্তমান দলকানা নির্বাচন কমিশন ভোটারের উপস্থিতি যা ঘোষণা করবে কিংবা যাকেই বিজয়ী ঘোষণা করবে, সেটাই গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় এবং তাকেই নির্বাচনী উপস্থিতি/ফলাফল হিসেবে গণ্য করা হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও এর কোন ব্যতিক্রম হবে মনে করার কোন কারণ নেই। মূলতঃ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফলও পূর্ব নির্ধারিত, ভোটার উপস্থিতি কত দেখানো হবে তাও পূর্ব নির্ধারিত। বর্তমানে চলছে ঐ পূর্ব নির্ধারিত ভোটার উপস্থিতি, নির্বাচনী ফলাফল ও অন্যান্য কূটকৌশল সম্বলিত ব্লু-প্রিন্টের বাস্তবায়ন।

বস্তুত, আগামি ৭ জানুয়ারির ঘোষিত নির্বাচন কেবল পূর্ব নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত সাজানো নাটকই নয়; এটা স্রেফ একতরফা নির্বাচন। বর্তমান মাফিয়া সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে চলমান একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক আইনে সর্বজনীন মানধিকারের ঘোষণায় (Universal Declaration of Human Rights) যথার্থ নির্বাচনের কথাই উল্লেখ আছে। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে সুষ্ঠু,অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। নকল ভোটারের উপস্থিতি সৃষ্টি করেও না। কারণ, নির্বাচন হতে হবে প্রভাব ও মতলবমুক্ত। যার মাধ্যমে মানুষ স্বাধীনভাবে তার পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে পারবে। বর্তমানে যা হচ্ছে তা নির্বাচন নয়, তা হচ্ছে `নির্বাচন নির্বাচন খেলা`। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রমাণ করতে গিয়ে বর্তমান মাফিয়া সরকার নির্বাচনে মানুষের ভোট প্রদানের অধিকার কেড়ে নেয়ার সাথে সাথে সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন অধিকার কেড়ে নেয়াসহ নানাবিধ উদ্ভট ও উলঙ্গ কৌশল গ্রহণ করেছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের কাছ থেকে কার্ড জব্দ করা, বিশেষ উদ্দেশ্যে আনসার ভিডিপিসহ অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তাদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানের অপতৎপরতা এবং আনসার ভিডিপিসহ সামাজিক সুরক্ষা ভোগীদের পরিবারের সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে বাধ্যতামুলক উপস্থিতির ব্যবস্থা কার্যত মানুষকে জিম্মি করার শামিল।

চলমান অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সচেতন নাগরিক সমাজকে বর্তমান অবৈধ সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল সম্মিলিত ফন্দি ও কূটকৌশল ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে, অন্যথা জগদ্দল পাথরের ন্যায় এই ফ্যাসিস্ট সরকার অনির্দিষ্ট কালের জন্য এই জাতির কাঁধে চেপে বসবে। আমরা বিশ্বাস করি তাবৎ বিশ্বের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ, গণতন্ত্রকামী দেশসমূহ এবং জাতিসংঘসহ মানবাধিকারের স্বপক্ষের আন্তর্জাতিক মহল অনতিবিলম্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের মানবাধিকার রক্ষার্থে দৃশ্যমান ও কার্যকরভাবে এগিয়ে আসবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here